Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রতিবেদন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম বাজার পরিস্থিতি

  অদ্য ১৪/০৭/২০২৪ খ্রি:, রবিবার, ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশক্রমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দুইটি প্রজ্ঞাপিত বাজার শিবগঞ্জ ও কানসাট সরেজমিন বাজার পরিদর্শন করি। বাজার মনিটরিং কালে, অনুসন্ধানে পাওয়া যায় যে, ঐ সকল বাজারের সকল আড়তে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ হিসেবে আম বেচা কেনা করা হচ্ছে।

সরকারি হিসাবে ৪০ কেজিতে মণ হলেও দীর্ঘ দিনের চলে আসা প্রথা অনুসারে বরাবরেই আড়ৎদাররা নানা অজুহাতে প্রতি মণে আদর্শ পরিমাণের থেকে আম বেশি নিয়ে থাকেন। কৃষক ও আড়ৎদাররা বলেন যে গত ৩/৪ বছর ধরে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ হিসেবে বেচা কেনা করা হচ্ছে। এর আগে তা ছিল ৪৬-৪৮ কেজি। আম বিক্রি করতে আসা কৃষকদের সাথে সরাসরি কথা বলে জানা যায় যে, “৫২ কেজিতে মণ” বাজার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ কাজ করে এবং প্রায় প্রতিদিনই আড়ৎদারদের সাথে এ বিষয়ে মনমালিন্য চলে। চাষীরা আপত্তি জানালে আড়ৎদাররা আম নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন চাষীরা। পরিপক্ব আম বাগান থেকে সংগ্রহ করায় এ আম বিক্রি করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। তাছাড়া আম রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ রাখলে আমের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। চাষীরা বলেন যে, তারা আড়ৎদারদের ‘সিন্ডিকেট’ এর হাতে জিম্মি। বাজারের আড়ৎদারদের সংগঠন এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। স্থানীয় বা জেলা প্রশাসন থেকে কত কেজিতে মণ হবে এ নিয়ে কোন নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে তাদের অনেকেই বলেন যে, এ রকম কোন নির্দেশনা নেই এবং থাকলেও তা তারা জানেন না।

স্থানীয় বাজারে চাষী ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, যখন বাজারে আমের সরবরাহ কম থাকে তখন তারা আম চাষীদের কাছ থেকে একটু বিলম্বে আম ক্রয় করেন এবং বৃষ্টির ‍দিনগুলোতে তারা আড়তে আসেন দেরীতে বা আড়তের কার্যক্রম শুরু করেন দেরীতে। ফলে আম দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকায় ওজন ও গুণগত মান উভয়ই কমে যায়।

বাজারের অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে কিনা, তা জানতে চাইলে তারা বলেন বেশ কয়েকবার জানানো হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন সময় সমঝোতার ভিত্তিতে তারা এ সমস্যার সমাধানের পরামর্শ পেয়েছেন।

অন্যদিকে আড়ৎদারদের সাথে কথা বললে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ আম ক্রয়ের সত্যতা মেলে। তারা জানান যে গত ৩/৪ বছর ধরে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম চাষীদের থেকে আম ক্রয় করে আসছেন। তাদের ভাষ্য চাষীদের কর্তৃক আগত আমের কোন সটিং বা গ্রেডিং করা থাকে না। এ অবস্থায় আম কিনতে না চাইলে চাষীরা নিজে থেকেই ২ কেজি বেশি দিয়ে থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে আড়ৎদারেরা ৫৪ কেজিতেও আম ক্রয় করেন।

৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ হিসেবে আম ক্রয় করার কোন আইনি নির্দেশনা তাদের কাছে আছে কিনা তা জানতে চাইলে বলে দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ভাবেই আম কিনে আসছেন। এটি একটি প্রচলিত প্রথা তবে বিগত কিছু বছর ধরে প্রতি মণে একটু বেশিই আম নিচ্ছেন তারা।

এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন সকালে আম ক্রয় করে তাদের সেগুলো রাতের মধ্যে অন্য জেলাগুলোতে চালান করতে হয়। আর এ সময় ১০-১২ ঘন্টায় প্রতি মণে আম শুকিয়ে ২-৩ কেজি করে কমে যায়। পণ্য পরিবহণে কালে প্রতি ক্যারেটে বা ২৫ কেজিতে ১-২ কেজি আম নষ্ট হয় বলে তারা জানান। তাছাড়া আম যখন পেঁকে যায় তখন প্রতি মণে কমপক্ষে ৩ কেজি কমে।                                                     

চাষীরা যে ধরণের আম বাজারজাত করেন তাতে পাতা ও আমের বোটা সংযুক্ত থাকে যার ওজন প্রতি প্রায় ২ কেজি (প্রতি ৫২ কেজিতে)। ফলে আম ক্রয়ের সময় প্রতি মণে অতিরিক্ত আম নিতে তারা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের কাছে অন্যান্য বাজারের অবস্থা কিরূপ তা জানতে চাইলে তারা বলেন যে সব বাজারেই একই পদ্ধতিতে আম ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।

বাজারের এরূপ অবস্থার পরিবর্তন বা এর সমাধান কি হতে পারে তা কৃষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন যে, আমরা কৃষক আমাদের কথা কেউ শোনে না। আমরা এদের (ব্যবসায়ীদের) হাতে জিম্মী। যদি ৪৪ থেকে ৪৬ কেজিতে মণ হতো তাহলে আমরা লাভবান হতাম। এ জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার কথাও তারা বলেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে কিছু শুপারিশ:

১. সরকার অনুমোদিত পরিমাপে বাজারে আম ক্রয়বিক্রয়ের জন্য বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ;

২. নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা;

৩. ব্যবসায়ীদের মত কৃষক সমবায় সমিতি গড়ে তোলা;

৪. কৃষকদের মাঝে সরকারি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করা;

৫. সকল বাজারে সরকার অনুমোদিত আদর্শ ক্যারেট প্রচলন করা;

৬. আইন অমান্য করলে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করা;

৭. আম চাষীদের কন্টাক্ট ফার্মিং এর অধীনে নিয়ে আসা;

৮. বিদেশে আমের বাজার সম্প্রসারণ করা;

 ৯. স্থানীয়ভাবে কিছু আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা;

১০. আম বাজার সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও প্রোপার রেগুলেশনের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এর লোকবল বৃদ্ধিকরা।


মোঃ মোকাব্বের আলম নাঈম 

 কৃষি বিপণন কর্মকর্তা  

                     কৃষি বিপণন অধিদপ্তর 

 চাঁপাইনবাবগঞ্জ।